ঢাকা , শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫ , ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন

মাল্টার নাগরিকত্ব চেয়েও পাননি টিউলিপের চাচি-চাচাতো বোন

ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় : ১০-০১-২০২৫ ০৮:৪২:৪৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১০-০১-২০২৫ ০৮:৪২:৪৯ অপরাহ্ন
মাল্টার নাগরিকত্ব চেয়েও পাননি টিউলিপের চাচি-চাচাতো বোন টিউলিপ সিদ্দিক, শাহীন সিদ্দিক ও বুশরা সিদ্দিক। ফাইল ছবি
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় ইউরোপের দেশ মাল্টার নাগরিকত্ব চেয়েও পাননি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের স্ত্রী শাহীন সিদ্দিক ও তাদের মেয়ে বুশরা সিদ্দিক। শাহীন সিদ্দিক ২০১৩ ও ২০১৫ সালে দুই দফায় মাল্টার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন। তবে অর্থপাচার, দুর্নীতি, প্রতারণা ও ঘুষের অভিযোগ থাকায় তার দুটি আবেদনই প্রত্যাখ্যান করা হয়। তাদের মেয়ে বুশরা সিদ্দিকের নাগিকত্বের আবেদনও খারিজ করেছিল মাল্টা কর্তৃপক্ষ।

ফাঁস হওয়া নথির বরাতে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদপত্র দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

শাহীন সিদ্দিক ও বুশরা সিদ্দিকের আরেকটি পরিচয় রয়েছে। শাহীন যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের (ট্রেজারি) অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী (ইকোনমিক সেক্রেটারি) টিউলিপ সিদ্দিকের চাচি ও বুশরা চাচাতো বোন। টিউলিপ শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে স্নাতকের পর বুশরা সিদ্দিক জেপিমরগান ব্যাংকে চাকরি শুরু করেন। পরে সেই চাকরিও ছেড়ে দেন। ২০১৮ সালে উত্তর লন্ডনে গোল্ডারস গ্রিন এলাকায় স্বামীর সঙ্গে যৌথভাবে ১৯ লাখ পাউন্ডের একটি বাড়ি কেনেন বুশরা। 

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে শুধু শাহীন সিদ্দিক মাল্টার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন। তবে ওই আবেদন নাকচ করে দেয় হেনলি অ্যান্ড পার্টনারস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ওই সময় মাল্টায় বিনিয়োগের মাধ্যমে বিদেশিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কর্মসূচি দেখভালের বিশেষ দায়িত্বে ছিল প্রতিষ্ঠানটি।

এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন সরকারি জমি অবৈধভাবে দখলের অভিযোগ উঠেছিল একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শাহীন সিদ্দিকের সংশ্লিষ্টতা থাকায় তার মাল্টার পাসপোর্টের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।

শাহীন সিদ্দিক সংশ্লিষ্ট যে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে, সেটির নাম প্রচ্ছায়া। শাহীন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারপারসন ছিলেন। প্রচ্ছায়ায় নিজের পদের বিষয়টি ২০১৩ সালে মাল্টার নাগরিকত্বের আবেদনেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। এ ছাড়া ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার পতনের আগপর্যন্ত তার সামরিক উপদেষ্টা ছিলেন তারিক সিদ্দিক।

শেখ হাসিনার সমালোচকরা দাবি করেন, প্রচ্ছায়ার জন্য জমি দখল করতে বাংলাদেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীকে কাজে লাগিয়েছিলেন তারিক। ২০১৬ ওই জমি বিক্রি করে দেয় প্রচ্ছায়া। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ঢাকা ও গাজীপুরে সরকারি ও ব্যক্তিমালিকাধীন জমি দখল ও ভূমিদস্যুতার অভিযোগ রয়েছে।

নথিপত্রে দেখা গেছে, ২০১৩–এর পর ২০১৫ সালের মার্চে মেয়ে বুশরা সিদ্দিকের সঙ্গে যৌথভাবে মাল্টার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন শাহীন সিদ্দিক। সেবার নাগরিকত্বের জন্য শাহীনকে খরচ করতে হতো ৬ লাখ ৫০ হাজার ইউরো। আর বুশরার খরচ পড়ত ২৫ হাজার ইউরো। এ ছাড়া ফি বাবদ হেনলি অ্যান্ড পার্টনারসকে দিতে হতো ৭০ হাজার ইউরো।

২০১৫ সালে মাল্টার নাগরিকত্বের আবেদনের জন্য মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের একটি ব্যাংক হিসাবের লেনদেনের তথ্য (স্টেটমেন্ট) দেখান শাহীন। তাতে ২৭ লাখ ৬০ হাজার ৪০৯ ডলার জমা দেখানো হয়। আগের দুই মাসে ১১টি লেনদের মাধ্যমে ওই অর্থ হিসাবটিতে জমা দেওয়া হয়েছিল। তবে সেই অর্থের কোনো উৎসের কথা নথিতে জানানো হয়নি।

বুশরা যুক্তরাজ্যের লন্ডনে শিক্ষার্থী ভিসায় অবস্থানের সময় নিজের ঠিকানা দিয়েছিলেন মধ্য লন্ডনের সেন্ট প্যানক্রাস স্টেশনের কাছের একটি বাড়ির। ওই বাড়ি থেকে কয়েক মিনিটের হাঁটা দূরত্বে কিংস ক্রস এলাকায় টিউলিপ সিদ্দিকের ফ্ল্যাট রয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফ্ল্যাটটি ২০০৪ সালে তাকে বিনা মূল্যে দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ–সংশ্লিষ্ট একজন আবাসন ব্যবসায়ী।

২০১১ সালের নথি অনুযায়ী, ওই সময় বুশরা প্রচ্ছায়ার পরিচালক ছিলেন। তবে ২০১৫ সালে মাল্টার যৌথ নাগরিকত্ব আবেদনের সময় প্রচ্ছায়ার কথা উল্লেখ করেননি শাহীন সিদ্দিক। এর বদলে চট্টগ্রামের দ্য আর্ট প্রেস প্রাইভেট লিমিটেডকে নিজের প্রতিষ্ঠান হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন তিনি।

ওই সময় হেনলি অ্যান্ড পার্টনারসের একজন কর্মকর্তা অভ্যন্তরীণ এক ই–মেইলে লিখেছিলেন, যদিও দ্য আর্ট প্রেস প্রাইভেট লিমিটেড সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক তথ্য পাওয়া যায়নি। তারপরও মাল্টার কর্তৃপক্ষের এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আরও তথ্য প্রয়োজন। ওই ই–মেইলের জবাবে আরেকজন কর্মকর্তা লিখেছিলেন, ‘১৯২৩ সালে এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন শাহীন সিদ্দিকের দাদা। সে সময় ‘ছাপানোর’ কাজ ছিল প্রতিষ্ঠানটির মূল ব্যবসা। প্রতিষ্ঠানটিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে রয়েছেন শাহীন (২০১৩ সাল থেকে)।’

২০১৫ সালে মাল্টার নাগরিকত্বের আবেদনের জন্য মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের একটি ব্যাংক হিসাবের লেনদেনের তথ্য (স্টেটমেন্ট) দেখান শাহীন। তাতে ২৭ লাখ ৬০ হাজার ৪০৯ ডলার জমা দেখানো হয়। আগের দুই মাসে ১১টি লেনদের মাধ্যমে ওই অর্থ হিসাবটিতে জমা দেওয়া হয়েছিল।

২০১৫ সালের শেষের দিকের ফাঁস হওয়া নথিপত্রে দেখা গেছে, ‘আবেদন খারিজ এবং/অথবা বাতিল’ শিরোনামে একটি তালিকায় শাহীন সিদ্দিকের নাম রয়েছে। মাল্টার সরকারি প্রজ্ঞাপন থেকেও নিশ্চিত হওয়া গেছে যে শাহীন সিদ্দিক বা বুশরা সিদ্দিক—কেউই দেশটির নাগরিকত্ব পাননি। তাঁরা যে পাসপোর্ট পাননি, তা নিশ্চিত করেছে হেনলি অ্যান্ড পার্টনারসও।

গত আগস্টে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তারিক সিদ্দিক ও শাহীন সিদ্দিকের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া গুমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সম্প্রতি তারিক সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ বিষয়ে কথা বলতে তারিক সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বুশরা ও শাহীন সিদ্দিকের সঙ্গে মাল্টার নাগরিকত্বের আবেদনের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করেছিল ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। তবে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের মুদ্রানীতি অনুযায়ী, এক বছর সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কেউ ১২ হাজার ডলারের বেশি দেশের বাইরে নিতে পারবেন না।

বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ